মৌসুম বদলের সময়, জ্বর -সর্দি -কাশি তো ঘরে ঘরে । সমস্যা হল এসবের ডাক্তার আবার দোকানে-দোকানে । হ্যাঁ, আমি ফার্মেসির দোকানদারদের কথাই বলছি । আমাদের বাসার গৃহপরিচারিকাকে এক দোকানের ডাক্তার (!!) তিনটা এজিথ্রোমাইসিন দিয়ে বলেছে যে তিন দিন খেলেই জ্বর চলে যাবে ।
এখন এন্টিবায়োটিক দেয়ার কিছু নির্দিষ্ট উপসর্গ আছে যা দেখা না যাওয়া পর্যন্ত আমরা এন্টিবায়োটিক দেই না, এমতাবস্থায় কেউ যদি ‘চলে যাবে’ বলে গ্যারান্টি দেন তবে অশিক্ষিত একজন মানুষ তো প্রলোভিত হবেনই।
দ্বিতীয়ত, এর ডোজ সম্পূর্ণ করা অতীব প্রয়োজনীয় তার নিজের ও অন্য সবার জন্য। কিন্তু যেহেতু এন্টিবায়োটিকের দাম অন্যান্য ঔষধের তুলনায় বেশি, তাই ডোজ সম্পূর্ণ করার পরামর্শ দেয়া মাত্র রোগীর চোখে থেকে “বেটা কষাই , তুই তো ঔষধ কোম্পানীর টাকা খাস” গালি ঠিকরে বের হয় ।
কাজেই অনুরোধ করার পরে আমরা নিরুপায় হয়ে যাই।
আজকে চেষ্টা করি ডাক্তার হিসেবে ও ডাক্তারদের পক্ষ থেকে একটু বোঝাতে আপনাদের, আপনারা যারা সুশিক্ষিত ও যুক্তি বোঝেন বলে আশা করা যায় তাদের জন্যই এ লেখা ।
In fact ‘সহজ ভাষায় ডাক্তারী শিক্ষা’ ও বলতে পারেন;
ধরা যাক আপনি দেশের প্রধানমন্ত্রী আর একেকটি অংগ একেকটি প্রতিষ্ঠান আর জীবাণুরা হল জংগী বা Terrorist । এখন দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে Terror Attack হল ।
এখন আপনি খবর নেবেন কারা আক্রমণ করেছে, যদি নরমাল হরতাল-পার্টির আক্রমণ হয় তবে পুলিশই যথেষ্ট। অর্থাৎ প্যারাসিটামল- হিস্টাসিনেই কাজ হবে । সেক্ষেত্রে অন্য বাহিনী ডেকে আনাটা যেমন্ বোকামো, তেমনি উপসর্গ ছাড়া এন্টিবায়োটিক দেয়াও বোকামো।
দেখা গেল সংখ্যায় অল্প কিন্তু বিদেশী terrorist ,তাহলে আপনি ‘ঢাকা এটাক’ সিনেমার মতই SWAT ডাকবেন আর যদি তারা সংখ্যায় অনেক এবং সশস্ত্র হয় সেক্ষেত্রে SWAT’র যদি সাহায্য প্রয়োজন হয় তবে ডাকবেন সেনাবাহিনীকে।
আমরা এন্টিবায়োটিক কোনটি দেবো, মুখে খেতে দেবো নাকি সরাসরি ইঞ্জেকশন দিয়ে রক্তেই পৌঁছে দেব তা কিন্তু এভাবেই সিদ্ধান্ত নেই।এটা বোঝার জন্য অনেক সময় পরীক্ষা করতে দেই।
সেটা কিন্তু বিশেষ ডায়াগনস্টিক কোম্পানীর প্রতি ভালোবাসা থেকে নয়, বরং রোগ নির্ণয়ের সুবিধার্থেই ।
এবার ধরা যাক আক্রমণ শুরু হল, আর অর্ধেক আক্রমণের পরেই জংগীর দলের কিছু সদস্য মারা গেলো আর কয়েকজন ছত্রভংগ হয়ে প্রাণ নিয়ে পালিয়ে বাঁচলো। সরকারপ্রধান হিসেবে কি সিদ্ধান্ত দেবেন আপনি?
‘আরে গেসে যাউজ্ঞা, ছেড়ে দেই’ ? নাকি ‘ওদের ধরো, সব কিছু জানো এবং মারো’ ?
দ্বিতীয়টিই তো্ তাইনা? তা নাহলে তো সে জেনে গেলো কে – কিভাবে – কেমন করে আক্রমণ ঠেকায় এবং সমস্ত তথ্য জেনে এবার সে দ্বিগুণ শক্তি নিয়ে আক্রমণ করবে ।
শরীরের বেলায়ও একই ব্যাপার ঘটে , জীবানুরা যখন এন্টিবায়োটিকের আক্রমণে দিশেহারা আর আপনি সুস্থবোধ করার খুশীতে পাগলপারা হয়ে এন্টিবায়োটিক ছেড়ে দেন ডোজ সম্পূর্ণ না করেই, তখনই করে বসেন ভুল । এই এন্টিবায়োটিক পরবর্তীতে একই রোগের জন্য আর এতোটা কাজ করবেনা । ফলে আপনি হয় ভাবতে বসবেন ডাক্তারের দোষ বা ঔষধে ভেজাল ।
ফলশ্রুতিতে আপনাকে নির্ভর করতে হবে আরো কঠিন কোন ঔষধের উপরে , যা শরীরের জন্য ভালো তো নয়ই ।
এদিকে জংগীদের কেউ বেঁচে পালিয়ে গেলে আবার যদি ফিরে আসে, তবে মোচ লাগিয়ে বা সাজ বদলে আসবে যেন আপনি তাদের চিনতে না পারেন। ঠিক তেমনি জীবানূদের ঘটে genetic mutation, ফলে আগের ঔষধ তাদের উপর কার্যকরী হয়না আর। কিন্তু তার action হয় আরো ভয়াবহ ।
এই জীবানূদের যদি হাঁচি-কাশি অর্থাৎ বাতাসে ছড়িয়ে দেয়ার ব্যবস্থা থাকে তবে আপনার অবহেলার জন্য আক্রান্ত হচ্ছেন আপনার জীবনসংগী বা মা-বাবা বা সন্তান। তারা ছড়িয়ে দিচ্ছে আরো হাজারো মানুষের মাঝে সেই genetic mutation হয়ে যাওয়া বিধ্বংসী জীবানুকে।
ভয়াবহ এই পরিণতিই কি চান আপনি ? নিশ্চয়ই না ।
কাজেই আজ থেকে, এখন থেকেই শপথ নিন যে এন্টিবায়োটিক খেতে হলে ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন এবং তার ডোজ সম্পূর্ণ করবেন;
আপনার নিজের ও পরিবারের সুস্বাস্থ্যের কথা ভেবে, প্লিজ ।
#আমি_এন্টিবায়োটিকের_ডোজ_সম্পূর্ণ_করি_আপনি_করেন?
লিখেছেনঃ ডা.সংগীতা হালদার রায়
ছবি মডেলঃ ডা.সংগীতা